কথাসাহিত্যের শিল্পশৈলী : অ্যালিস মুনরোর সঙ্গে কথোপকথন

ভাষান্তর : হোসেন আলমগীর

ভাষান্তর : হোসেন আলমগীর

কানাডার কথাসাহিত্যিক অ্যালিস মুনরো ২০১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।তিনি মূলত ছোটগল্পকার।ছোটগল্প রচনায় অসাধারণ নৈপুণ্য তাঁকে এ-সম্মান এনে দিয়েছে।অবশ্য এর আগেও মুনরোর সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি এসেছে; নিজ দেশে তিনি তিনবার ‘Governor General Award’ লাভ করেছেন এবং ২০০৩ সালে তিনি Away From Her গল্পগ্রন্থের জন্য অর্জন করেছেন ‘Man Booker International Prize’।তাঁর ছোটগল্প The New Yorker, The Paris Review এবং The Atlantic Monthly-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।মুনরোর গল্পের প্রেক্ষাপট জুড়ে আছে অন্টারিওর একটি ছোট মফস্বল শহর ‘Huron County’, যেখানে তিনি তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন।অনেক সমালোচক মুনরোর লেখনীকে স্মৃতিচারণের সঙ্গে তুলনা করছেন, কেননা তাঁর গল্পের বিষয়বস্তুতে প্রাধান্য পেয়েছে মুনরোর ব্যক্তিজীবনের নানাবিধ অভিজ্ঞতা।তিনি মূলত ১৯৫০ সাল থেকে ছোটগল্প রচনায় ব্যাপৃত এবং তাঁর প্রথম গল্প ছাপা হয় কলেজ শিক্ষার্থীদের সাহিত্যপত্রিকা Fliio-তে, শিরোনাম ছিল ‘The Dimension of Shadow’।

১৯৯৪ সালে তিনি জ্য ম্যাকক্যলকে প্যারিস রিভিউ পত্রিকার জন্য একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।উল্লেখ্য, প্যারিস রিভিউ পত্রিকার সাক্ষাৎকারগুলো একটি বিশেষ চরিত্র বহন করে; এখানে সাহিত্যিকরা তাঁদের রচনারীতি, অভ্যাস, সময়সূচি, লেখালেখির মূলমন্ত্র, দুর্বলতা, ব্যর্থতা এবং লেখালেখির সংকট ও উত্তরণের পন্থা নিয়ে খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা করে থাকেন।মুনরোর এ-সাক্ষাৎকারে তার প্রমাণ মেলে।কেননা, এখানে উঠে এসেছে মুনরোর ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সংসার, বিবাহ, প্রেম, প্রাত্যহিক সময়সূচি, লেখা নিয়ে সংকট এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর শঙ্কা ইত্যাদি প্রসঙ্গ।

সাহিত্য রচনায় সাফল্য অর্জনের জন্য তিনি কয়েকটি সরল সত্য প্রকাশ করেছেন, যেমন : কেউ যদি প্রচণ্ড পরিশ্রম করে তাহলে সে সফল হতে পারবে।আরো কিছু অকপট সত্য তিনি স্বীকার করেছেন, যা আমরা সচরাচর এত বড়মাপের লেখকের কাছ থেকে শুনি না।যেমন – তিনি সবসময় সাহিত্য পরিমণ্ডল এড়িয়ে চলতেন এবং কারণটা ছিল ‘ভয়’।মুনরো স্বীকার করেছেন যে, অন্যান্য লেখকের কথাবার্তা এবং আলোচনা শুনে যদিও তাঁর মনে হতো যে, তারা তাঁর চেয়ে বেশি জানে কিংবা তাঁর চেয়ে দক্ষ, তাহলে সেটা তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারত।আরো একটি ব্যাপার নিয়ে তাঁর আতঙ্ক; বার্ধক্য।বার্ধক্য চলে এলে তখন তাঁর কী হবে, কিংবা লেখালেখির ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে তাঁর কী করার থাকবে?  আদ্যন্ত তাঁর সাক্ষাৎকারটি পড়লে মনে হবে কোনো এক অনভিজ্ঞ সাহিত্যিকের মতামত শুনছি, জ্য ম্যাকক্যলকের কাছেও ব্যাপারটি সেরকমই মনে হয়েছে।পাঠকরা, বিশেষত তরুণ কথাসাহিত্যিকরা এ-কথোপকথন থেকে প্রেরণা পাবেন এমন প্রত্যাশায়।

– লেখক

নিউইয়র্ক সিটি থেকে অন্টারিওর ক্লিনটনে কোনো সরাসরি উড়োজাহাজ নেই, তিন হাজার বাসিন্দার একটি কানাডীয় শহর ক্লিনটন, যেখানে অ্যালিস মুনরো বছরের বেশির ভাগ সময় থাকেন।জুনের খুব সকালে, টরন্টোতে একটি গাড়ি ভাড়া করে, আমরা লাগার্দিয়া ছেড়ে তিন ঘণ্টার পথ পেরিয়ে এলাম, রাস্তা ক্রমশ সরু হয়ে অনেকটা গ্রামীণ রূপ নিচ্ছিল।সাঁঝের কাছাকাছি আমরা মুনরো যে-বাড়িতে তাঁর দ্বিতীয় স্বামী গ্যারি ফ্রেমলিনকে নিয়ে থাকেন তার কাছে থামলাম।বাড়িটার পেছনে একটি টানা উঠোন এবং একটি অগোছালো ফুলবাগিচা, এটাই হচ্ছে সেই বাড়ি, মুনরো খুলে বলেছিলেন, যেখানে গ্যারি জন্মেছিল।রান্নাঘরে তিনি সুবাসিত লতাপাতা দিয়ে একটি সাদামাটা পদ রাঁধছিলেন।খাবার ঘরের চাতাল থেকে মাচা পর্যন্ত বইয়ের সারি; একপাশে ছোট টেবিলের ওপর একটি সেকেলে টাইপরাইটার।মুনরো এখানেই কাজ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *