গ্রামীণ সংস্কৃতি রক্ষায় শিল্পকলার এগিয়ে আসা

মনজুরুল হক

কমছে জাপানের জনসংখ্যা। নতুন খবর এটা মোটেও নয়। জাপানের এক সময়ের বর্ধিষ্ণু বিভিন্ন জনপদকে এখন ক্রমশ হালকা হয়ে আসা জনবসতির কারণে দেখা দেওয়া নানারকম সমস্যা সামাল দেওয়ার উপায় নিয়ে রীতিমতো মাথা ঘামাতে হচ্ছে। সমস্যার চটজলদি সমাধান অবশ্য দেশের শক্ত করে সাঁটা দুয়ার জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জ হয়ে পড়া এশিয়ার অন্য কিছু দেশের জন্য খুলে দেওয়ার মধ্যে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এ-কথা যে জাপানের নীতিনির্ধারকদের জানা নেই তা অবশ্য নয়। সেই পথে অগ্রসর হলে নতুন নানারকম সমস্যাও যে এর মধ্য দিয়ে দেখা দিতে পারে, সে-বিষয়টি সর্বদা তাদের মনে রাখতে হওয়ায় সহজ সেই রাস্তায় পা বাড়ানোর মতো সৎসাহস তারা দেখিয়ে উঠতে পারছেন না। তাই জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে হ্রাস পাওয়ার সমাধান খুঁজে নিতে বিকল্প নানারকম পথের সন্ধানে তাদের থাকতে হচ্ছে।

জাপানের জনসংখ্যার এই দ্রুত নিম্নমুখী পথে ধাবমান গতির খোঁজ স্বল্পকালীন সময়ের জন্য টোকিও, ওসাকা কিংবা দেশের অন্য নগরকেন্দ্রগুলো ভ্রমণে আসা পর্যটকদের চোখে না পড়ারই কথা। উলটোভাবে বরং জনসংখ্যার চাপের ভ্রান্ত দিকগুলোই তাদের চোখে বেশি করে ধরা দিতে পারে। বিশেষ করে টোকিওর ব্যস্ত নগরকেন্দ্র শিবুইয়ার পথচারী পারাপারের ট্রাফিক-বাতির সামনে দাঁড়িয়ে যখন তারা অবাক হয়ে দেখবেন কয়েক মিনিট অন্তর সবুজ বাতি জ্বলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদচারণায় রাস্তা পার হচ্ছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ, তখন হয়তো অবাক হয়ে তারা ভাববেন, ‘কোথা থেকে আসছে মানুষের এই অফুরান স্রোত?’  বাস্তবতাকে আড়াল করে রাখা জাপানের আরো অনেক কিছুর মতো এও হচ্ছে এক মরীচিকা, দেশের ভ্রান্ত এক ছবিই কেবল ক্ষণিকের ভ্রমণে আসা বিদেশি পর্যটকের সামনে যা তুলে ধরছে। জাপানের জনসংখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত নানা সমস্যার আঁচ পেতে হলে যেতে হবে দেশের দূরবর্তী বিভিন্ন পল্লি জনপদে, নাগরিক জীবনের হৃদ্কম্পন যেখানে এখন সহজে ধরা পড়ার মতো বিপদ সংকেতের আঁচ দিচ্ছে।

এই গ্রীষ্মে আমার সুযোগ হয়েছিল ঠিক সেরকম এক জনপদে পদচারণার। টোকিওর প্রায় সাড়ে চারশো কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত আকিতা জেলা হচ্ছে শীতকালজুড়ে সবচেয়ে বেশি তুষারপাত হওয়া অঞ্চলগুলোর একটি। ফলে জেলার কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলোতে নাগরিক জীবন সহজ, আরামপ্রদ জীবন একেবারেই নয়। এ-কারণেই জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতার সঙ্গে উন্নত নাগরিক জীবনের খোঁজে তরুণ প্রজন্মের দেশের বড় শহরগুলোর দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা আকিতার জনসংখ্যার বিন্যাসের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব রেখে চলেছে। ফলে এখন সমগ্র জেলায় এমন এক ভারসাম্যহীন অবস্থা দেখা দিচ্ছে, জনসংখ্যার হিসাবের পরিসংখ্যান যখন বাস্তব অবস্থার খুবই উদ্ভট এক ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরে। আকিতা জেলায় যেমন প্রতি একশজনের মধ্যে গড়ে ত্রিশজনের বেশির বয়স এখন পঁয়ষট্টি বছর কিংবা এর বেশি। এই হার হচ্ছে জাপানের অন্য যে-কোনো জেলার চেয়ে বেশি। অন্যদিকে এর বিপরীতে শূন্য থেকে চৌদ্দ বছর বয়সসীমার শিশুদের আনুপাতিক হার হচ্ছে প্রতি একশজনে মাত্র প্রায় এগারোজন, যা হচ্ছে সারাদেশের হিসাবের মধ্যে সর্বনিম্ন। জেলার পল্লি অঞ্চলগুলোতে এই ভারসাম্যহীনতা হচ্ছে আরো অনেক বেশি ভয়াবহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *